ঢাকা    শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৫
গণবার্তা

শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদসহ ২২ জনের কারাদণ্ড

ঢাকা, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।শেখ হাসিনার ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি মামলায় ১ লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে; অর্থদণ্ড অনাদায়ে অতিরিক্ত ১৮ মাস কারাভোগ করতে হবে।জয় ও পুতুলের দণ্ড সজীব ওয়াজেদ জয়: এক মামলায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (অনাদায়ে ৬ মাস কারাভোগ)। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: এক মামলায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (অনাদায়ে ৬ মাস কারাভোগ)। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সাজামামলাগুলোতে আরও দণ্ডিত হয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্য, পরিচালক, উপ-পরিচালকসহ মোট ১৯ কর্মকর্তা।সংক্ষিপ্তভাবে কয়েকজনের দণ্ড— সাবেক একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন: দুই মামলায় মোট ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ: তিন মামলায় মোট ১৮ বছর সাবেক সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার: তিন মামলায় মোট ১৮ বছর সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: তিন মামলায় মোট ১৮ বছর রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা: তিন মামলায় মোট ১৫ বছর রাজউকের একাধিক সদস্য–পরিচালক: বিভিন্ন মেয়াদে ৩–৯ বছর এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকারকে তিন মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে।মামলার পটভূমিপূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা সরকারি প্লট অনিয়মের মাধ্যমে বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুদক ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনটি মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের মার্চে তিন মামলায় মোট ৪৭ জনকে আসামি করে তিনটি চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়।তিন মামলায় মোট ৮০ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ৩১ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন।রায় ঘোষণা ও পরবর্তী প্রক্রিয়া রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আজ রায় দেন। রায়ের কপি সংগ্রহের পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
২৭ নভেম্বর ২০২৫

রাজধানীতে আবার ভূমিকম্প

রাজধানী ঢাকায় আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির।তিনি জানান, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬। এটি স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প হলেও এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশাল।এর আগে গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ও শনিবার প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় চারবার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে শুক্রবার সকালে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে।শুক্রবারের ভূমিকম্পে ১০ জন নিহত হন এবং আহত হন ছয়শ’র বেশি মানুষ। এ ঘটনায় রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
২৭ নভেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত এই রায়কে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে।রায় প্রকাশ–এর ফলে কী পরিবর্তন হলো?আইন অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই ৩০ দিনের আপিলের সময় গণনা শুরু হয়। এর অর্থ— ✔ আসামিরা এখন আপিল করতে পারবেন ✔ রাষ্ট্রপক্ষও প্রয়োজনে আপিল বা রিভিউয়ের সুযোগ পাবে ✔ আপিল বিভাগে শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর হবে না দণ্ডআইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মাধ্যমে মামলাটি এখন নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করলো।কোন কোন অভিযোগে দণ্ড?১৭ নভেম্বর দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়েছিল— দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড, একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড, একটি অভিযোগে আসাদুজ্জামান কামালকে মৃত্যুদণ্ড, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রমাণিত হয়েছে— ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, নির্যাতন, হত্যা এবং সংগঠিত তৎপরতার সঙ্গে আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র ছিল।ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণপূর্ণাঙ্গ রায়ে ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করে— অপরাধগুলো ছিল সংগঠিত, পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রবিরোধী। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তারা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে অপরাধকে উৎসাহিত করেছিলেন। সাক্ষ্য-প্রমাণ, নথি ও আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগে আসামিদের দায় সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছেরায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক উত্তেজনা ও ভিন্নমত দেখা দিয়েছে।সরকারপন্থীদের প্রতিক্রিয়াসরকারপক্ষ বলছে— “অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রায় দেওয়া হয়েছে—এটি আইনের শাসনের বিজয়।”বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়াবিরোধী দলের দাবি— “এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিন্নমত দমনের এক প্রক্রিয়া। তারা দ্রুত আপিল প্রক্রিয়ায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।”বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের রাজনীতি এখন আরও উত্তপ্ত হবে এবং আপিল শুনানি জাতীয় আলোচ্যসূচির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।আইনি বিশ্লেষণ: কী হবে সামনে?আইনজীবীরা মনে করছেন— আপিল বিভাগে এই মামলা দীর্ঘ শুনানি হতে পারে আসামিপক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আইনজীবীদের সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষও শক্তিশালী আইন টিম গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আদালত আপিল শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করলে মামলার ভবিষ্যৎ দিক স্পষ্ট হবে।জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়াসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রায় প্রকাশের পরই তীব্র আলোচনা শুরু হয়। এক পক্ষ বলছে, “বিচার পেয়েছে শহীদ পরিবারগুলো।” অন্য পক্ষ বলছে, “রায় রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত।”সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন— “এই রায়ের ফলে দেশের রাজনৈতিক বিভাজন আরও জটিল হবে, তবে আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলা যাবে না।” মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে বহু আলোচিত এই মামলার আইনি যাত্রা নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল। এখন সবার দৃষ্টি— আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়।
২৬ নভেম্বর ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া কামনা

প্রধান উপদেষ্টার খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া কামনা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি নিয়মিতভাবে দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় যেন কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকে, সে বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে। তিনি দেশবাসীর কাছে বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া প্রার্থনা করেন।অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা। তাঁর সুস্বাস্থ্য দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে ‘অত্যন্ত সংকটময়’। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) নয়াপল্টন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। দলের উদ্যোগে সারা দেশে বেগম জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।মির্জা ফখরুল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছেন। গত দুদিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত সংকটময় অবস্থায় আছেন।” তিনি দেশবাসীর প্রতি খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া করার আহ্বান জানান। দোয়া অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
৪ ঘন্টা আগে
আবারো পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি

আবারো পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি

আবারো উত্তেজনার মুখে পড়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর (এফও) জানিয়েছে, চলমান যুদ্ধবিরতি কোনো “ঐতিহ্যবাহী” যুদ্ধবিরতি নয়, বরং এটি নির্ভর করছে প্রতিবেশী দেশটির মাটি থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে কি না তার উপর। বিষয়টি শুক্রবার ডন অনলাইন প্রকাশ করেছে।পাকিস্তান এবং আফগান তালেবানের মধ্যে সম্পর্ক ক্ষমতায় আসার পর থেকে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১১ অক্টোবর থেকে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রয়েছে। ২০২১ সালে তালেবানদের কাবুল দখলের পর থেকে দুই দেশের সীমান্তে স্থল যুদ্ধ এবং পাকিস্তানি বিমান হামলার কারণে উভয়পক্ষের কয়েক ডজন লোক নিহত হয়েছে। এরপর থেকে বাণিজ্য কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে।সংঘর্ষের পর তুরস্ক ও কাতার মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে আসে। দোহায় প্রথম দফার আলোচনা ভঙ্গুর হলেও একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। দ্বিতীয় দফার আলোচনায় একটি সাধারণ চুক্তি হয়, তৃতীয় দফা আলোচনাও কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়।চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানি বিমান হামলার অভিযোগে আফগানিস্তানের পক্ষ আবারো উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আফগান পক্ষ পাকিস্তানের ওপর প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে।সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে হুমকি ও যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তাহির আন্দ্রাবি বলেন, “পাকিস্তান-আফগানিস্তানের চলমান যুদ্ধবিরতি ঐতিহ্যবাহী নয়। এটি বোঝায় যে, আফগান মাটিতে থাকা সন্ত্রাসী প্রক্সিদের মাধ্যমে পাকিস্তানে হামলা হবে না। কিন্তু এই যুদ্ধবিরতির পরও বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তাই এই অর্থে বলতে গেলে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর নয়। এটি মূলত টিটিপি, এফএকে এবং আফগান নাগরিকদের মাধ্যমে আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করার বিষয়।” দুটি প্রতিবেশী দেশের এই উত্তেজনা আবারো সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রশ্ন তুলেছে।
৩ ঘন্টা আগে
বিশ্বের প্রথম এক ডোজের ডেঙ্গু টিকায় অনুমোদন দিল ব্রাজিল

বিশ্বের প্রথম এক ডোজের ডেঙ্গু টিকায় অনুমোদন দিল ব্রাজিল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক লড়াইয়ে বড় অগ্রগতি দেখাল ব্রাজিল। দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এএনভিসা (ANVISA) বুধবার বিশ্বের প্রথম এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও মশাবাহিত রোগের বিস্তারের মধ্যে এ সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক” বলে আখ্যা দিয়েছে তারা।সাও পাওলোর বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বুটানতান ইনস্টিটিউটে তৈরি Butantan-DV নামের এই টিকা ১২ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষের জন্য ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, এতদিন বিশ্বে একমাত্র অনুমোদিত ডেঙ্গুর টিকা ছিল TAK-003, যা দুই ডোজে নিতে হয় তিন মাসের ব্যবধানে।কিন্তু ব্রাজিলের নতুন টিকা মাত্র এক ডোজেই কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে—এতে টিকাদান কর্মসূচি হবে আরও দ্রুত ও সহজ।বুটানতান ইনস্টিটিউটের প্রধান ড. এসপার ক্যালাস সাংবাদিকদের বলেন, “ব্রাজিলের বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। যে রোগ দশক ধরে আমাদের তাড়া করে এসেছে, আজ তার বিরুদ্ধে আমরা পেয়েছি শক্তিশালী অস্ত্র।”টিকাটি নিয়ে ১৬ হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত পরীক্ষায় ৯১.৬ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গেছে মারাত্মক ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে—যা গবেষকদের ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ ফল হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।ডেঙ্গুকে অনেকেই চেনেন “ব্রেকবোন ফিভার” নামে, কারণ তীব্র ব্যথা ও দুর্বলতা রোগীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। ভাইরাসটি বহনকারী এডিস মশা এখন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ছে, যেখানে আগে এ মশা তেমন ছিল না।২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৪৬ লাখ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে প্রায় ১২ হাজার—যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। শুধুমাত্র ব্রাজিলেই প্রায় অর্ধেক মৃত্যু ঘটেছে।স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন ২০২৪ সালের মোট ডেঙ্গু রোগীর প্রায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী।ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেক্সান্দ্রে পাদিলহা জানান, চীনের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান WuXi Biologics–এর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তারা ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ৩ কোটি ডোজ সরবরাহ করবে।নতুন এই এক ডোজের টিকা বৈশ্বিক ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে নতুন আশা জাগিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত উৎপাদন ও সহজ ব্যবহারের কারণে এটি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির চিত্র পাল্টে দিতে পারে।
১৮ ঘন্টা আগে
১৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫০ পিএম
ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচনের বিষয়ে কি আপনি একমত ?

ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচনের বিষয়ে কি আপনি একমত ?

  হ্যাঁ
  না
  মন্তব্য নেই
মোট ভোটদাতাঃ জন
টাইম ম্যাগাজিনে স্থান পেলেন ফটোগ্রাফার আমির হামজা, অভিনন্দন জানালেন ফারুকী

টাইম ম্যাগাজিনে স্থান পেলেন ফটোগ্রাফার আমির হামজা, অভিনন্দন জানালেন ফারুকী

যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সংবাদভিত্তিক সাময়িকী ‘টাইম ম্যাগাজিন’-এর ‘১০০ ফটোস অব দ্য ইয়ার’ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার আমির হামজা। তালিকাভুক্ত ছবিতে দেখা যায় দিদারুল ইসলামের জানাজার মুহূর্ত, যা আবেগ, গভীরতা ও বৈশ্বিক প্রভাবের কারণে স্বীকৃতি পেয়েছে।এই সাফল্যে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এটি শুধু আমির হামজার অসাধারণ শিল্পদৃষ্টির স্বীকৃতি নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও গর্বের মুহূর্ত। আমাদের দেশ ও প্রবাসীদের গল্প আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদার সঙ্গে প্রতিফলিত হচ্ছে।”ফারুকী আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বমঞ্চে সম্মানের সঙ্গে পরিচিত। এর আগে কেএম আসাদ, তসলিমা আক্তার ও মুনিরুজ্জামান-তাদের তোলা ছবিও টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায় জায়গা পেয়েছে। এছাড়া বহু বাংলাদেশি ফটোগ্রাফার অনবদ্য ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছেন।তিনি জানান, বাংলাদেশের ফটোগ্রাফি দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী শিল্পমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ফারুকী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথমবারের মতো ‘ফটোগ্রাফি’ আলাদা বিভাগ হিসেবে চালু করা হবে, যা সৃজনশীল প্রতিভা লালন এবং শিল্পচর্চায় নতুনত্ব আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশি ফটোগ্রাফির এই উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত উদযাপন করি। শিল্পের সব শাখাকে সামনে এগিয়ে নিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি কখনো থামবে না। আমির হামজাকে অভিনন্দন। আশা করি, বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরা আগামী দিনে আরও উজ্জ্বলভাবে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেবে।”চট্টগ্রামে ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া আমির হামজা ২০১৪ সালে ইউএসটিসি থেকে ফার্মেসিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার সময় থেকেই আলোকচিত্রের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয় এবং ২০১২ সালে অপেশাদারভাবে ছবি তোলা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ কর্মরত এবং তার তোলা বহু ছবি পূর্বে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠায় ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
৩ ঘন্টা আগে
ছোট্ট দানা, অসাধারণ উপকার

ছোট্ট দানা, অসাধারণ উপকার

প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসায় বহুদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে একটি ছোট গোল দানা—কাবাব চিনি। কিউবেব পেপার নামে পরিচিত এই মসলার আকার গোলমরিচের মতো হলেও এর লেজের মতো ছোট্ট ডাঁটা একে আলাদা করে চেনায়। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে ইউনানি, আয়ুর্বেদ, এমনকি প্রাচীন আরব চিকিৎসায়ও এটি ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। সময় বদলেছে, কিন্তু কাবাব চিনির গুরুত্ব এখনও কমেনি। আধুনিক গবেষণায়ও দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যরক্ষায় এর রয়েছে বিস্ময়কর উপকারিতা। হজমশক্তি বাড়াতে কার্যকর খাওয়ার পর অজীর্ণ, পেট ফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিক—এসব সমস্যা আজকাল খুবই সাধারণ। কাবাব চিনি হজমের এনজাইম সক্রিয় করে দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ কমায়, ফলে দীর্ঘমেয়াদে হজমশক্তি উন্নত হয়। কাশি ও গলা ব্যথায় উপশম শীত, ধুলা বা সংক্রমণ—যে কারণেই হোক, কাশি ও গলা ব্যথা সারাতে কাবাব চিনি বেশ পরিচিত। অনেকে সরাসরি দানা চিবিয়ে খান, কেউ আবার ক্বাথ বা হারবাল চা তৈরি করে পান করেন। এতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক উপাদান কফ কমায় ও গলার জ্বালা সারাতে সাহায্য করে। শ্বাসযন্ত্রে আরামের অনুভূতি হাঁপানি, সাইনাস বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য কাবাব চিনি একটি প্রাকৃতিক সহায়ক ভেষজ। এতে আছে অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি গুণ, যা শ্বাসনালির প্রদাহ কমাতে সহায়ক। শ্বাস হালকা করা ও বুকে জমে থাকা কফ বের করতেও এটি কার্যকর বলে হারবাল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ছোট্ট এই দানায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে। নিয়মিত গ্রহণে ভাইরাস–ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। সর্দি–কাশির মৌসুমে তাই অনেকে এটিকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা হিসেবে ব্যবহার করেন। মূত্রনালি পরিষ্কারে সহায়তা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে কাবাব চিনি বিশেষভাবে উপকারী। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ মূত্রনালিকে পরিষ্কার রাখে এবং ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি কমায়। যৌন শক্তি বাড়াতে প্রাচীন চিকিৎসায় পরিচিত ইউনানি চিকিৎসায় কাবাব চিনি পুরুষদের যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে শতাব্দী ধরে। এটি স্নায়ুবল বাড়ায় এবং প্রাকৃতিকভাবে যৌনশক্তি উন্নত করে বলে বলা হয়। অনেক ভেষজ টনিকের প্রধান উপাদানও এটি। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকর যেমনই হোক খাবার, কখনও কখনও মুখে দুর্গন্ধ থেকে যায়। কাবাব চিনি চিবিয়ে খেলে মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়, ফলে নিঃশ্বাস হয় সতেজ ও প্রাকৃতিকভাবে সুগন্ধযুক্ত। লিভার ও বিপাকক্রিয়ায় উপকার লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাবাব চিনি সহায়ক বলে আয়ুর্বেদে উল্লেখ আছে। এটি শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়ায়, যার ফলে ওজন কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে। আধুনিক জীবনযাপনে এই গুণগুলো বাড়তি সুবিধা এনে দেয়। কীভাবে গ্রহণ করবেন? অনেকেই সকালে ২–৩টি দানা চিবিয়ে খান। কেউ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে নেন, কেউ আবার হারবাল চা তৈরি করেন। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়—দিনে সর্বোচ্চ ৩–৪টির বেশি না খাওয়াই ভালো। সতর্কতা গর্ভবতী নারী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী বা যাদের পাকস্থলী দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি। প্রাকৃতিক ওষধিগুণে ভরপুর কাবাব চিনি আজও অনেকের ঘরের নির্ভরযোগ্য ভেষজ। ছোট্ট দানার মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই উপকারিতা একে সত্যিই করে তুলেছে অনন্য।
২৪ নভেম্বর ২০২৫
চাচাতো ভাইকে হত্যার দায়ে দুই সহোদরের মৃত্যুদণ্ড

চাচাতো ভাইকে হত্যার দায়ে দুই সহোদরের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাচাতো ভাইকে হত্যার দায়ে দুই সহোদরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় দুই আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।আদালত সূত্র জানায়, পারিবারিক বিরোধের জেরে তিন বছর আগে আসামি দুই ভাই পরিকল্পিতভাবে তাদের চাচাতো ভাইকে হত্যা করে। ঘটনার দিন ভুক্তভোগীকে ডেকে বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা লাশ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দিলে মামলা হয়।মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ দুই সহোদরকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। দীর্ঘ সাক্ষ্য–প্রমাণ ও যুক্তিতর্ক শেষে আদালত ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেন এবং দুই সহোদরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, এটি ন্যায়বিচারের বিজয়। অপরদিকে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে।
২৪ নভেম্বর ২০২৫
শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদসহ ২২ জনের কারাদণ্ড

শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদসহ ২২ জনের কারাদণ্ড

ঢাকা, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।শেখ হাসিনার ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপৃথক তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭ বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি মামলায় ১ লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে; অর্থদণ্ড অনাদায়ে অতিরিক্ত ১৮ মাস কারাভোগ করতে হবে।জয় ও পুতুলের দণ্ড সজীব ওয়াজেদ জয়: এক মামলায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (অনাদায়ে ৬ মাস কারাভোগ)। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: এক মামলায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (অনাদায়ে ৬ মাস কারাভোগ)। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সাজামামলাগুলোতে আরও দণ্ডিত হয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান, সদস্য, পরিচালক, উপ-পরিচালকসহ মোট ১৯ কর্মকর্তা।সংক্ষিপ্তভাবে কয়েকজনের দণ্ড— সাবেক একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন: দুই মামলায় মোট ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ: তিন মামলায় মোট ১৮ বছর সাবেক সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার: তিন মামলায় মোট ১৮ বছর সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: তিন মামলায় মোট ১৮ বছর রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা: তিন মামলায় মোট ১৫ বছর রাজউকের একাধিক সদস্য–পরিচালক: বিভিন্ন মেয়াদে ৩–৯ বছর এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকারকে তিন মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে।মামলার পটভূমিপূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা সরকারি প্লট অনিয়মের মাধ্যমে বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দুদক ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তিনটি মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের মার্চে তিন মামলায় মোট ৪৭ জনকে আসামি করে তিনটি চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়।তিন মামলায় মোট ৮০ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ৩১ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন।রায় ঘোষণা ও পরবর্তী প্রক্রিয়া রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত আজ রায় দেন। রায়ের কপি সংগ্রহের পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
২৪ নভেম্বর ২০২৫
বাঙালি জাতির নেপাল বিজয়

বাঙালি জাতির নেপাল বিজয়

নেপালের তরাই অঞ্চল। পাহাড় ছায়া, দুর্গম পথ আর কঠোর আবহাওয়া মিলিয়ে এমন এক এলাকা, যেখানে তৎকালীন ভারতের বা বাংলার কোনো মুসলিম সেনাবাহিনী আগে কখনও প্রবেশ করতে পারেনি। সময়টা ১৩৫০ সালের ২৭ নভেম্বর। আরবী নকশার ঘোড়ার মুখবন্ধ পরা একদল অশ্বারোহী ধুমধাড়াক্কা শব্দে এগিয়ে যাচ্ছে কাঠমাণ্ডুর দিকে। তাদের সামনে রয়েছেন বাংলার সুলতান—শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ, এক দূরদর্শী সম্রাট, যিনি শুধু নতুন ভূখণ্ড জয় করতেই আসেননি; আসছেন বাঙালি জাতির পরিচয়কে নতুনভাবে নির্মাণ করতে। স্বয়ম্ভুনাথের শিলালিপিতে অম্লান সেই আক্রমণ ইতিহাসের পাতায় নেপাল অভিযান এক অলৌকিক ঘটনা। কাঠমাণ্ডুর নিকটবর্তী স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরে পাওয়া এক শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে—৪৭০ নেওয়ারী সম্বৎ, অর্থাৎ ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে ‘পূর্ব দেশীয় সুলতান’ নেপালে প্রবেশ করেন এবং রাজধানী পর্যন্ত অগ্রসর হন। নেপালের রাজবংশীয় ইতিহাসেও এই আক্রমণের উল্লেখ রয়েছে। সুলতান বিপুল ধনসম্পদ নিয়ে বাংলায় ফিরে আসেন। তা শুধু ধন-দৌলতই নয়—এ অভিযানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ক্ষমতা, কৌশল আর বাঙালি অস্তিত্বের নতুন পরিচয়। বিভক্ত জনপদ থেকে একীভূত ‘বাঙ্গালাহ’ ইলিয়াস শাহের কীর্তি কেবল নেপাল জয়ে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি প্রথম শাসক যিনি লক্ষ্মণাবতী, সাতগাঁও/সপ্তগ্রাম ও সোনারগাঁও—এই তিনটি বিভক্ত বাংলা অঞ্চলে এক পতাকার নিচে একত্রিত করেন। এর আগে বাংলা বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল—গৌড়, রাঢ়, সমতট, পুন্ড্রবর্ধন। ভাষা একই হলেও শাসন ছিল পৃথক। ইলিয়াস শাহ এসে প্রথম ঘোষণা করেন: “এ ভূখণ্ডই বাঙ্গালাহ, আর এখানকার মানুষ বাঙালি।” তারই হাত ধরে জন্ম নেয় রাজনৈতিকভাবে একীভূত প্রথম বাংলা রাষ্ট্র। সমগ্র অঞ্চলে ‘বাঙালি’ পরিচয়ের বীজ বপন হয়। পরবর্তী যুগে মুগলদের সুবাহ-ই-বাঙ্গালাহ, পর্তুগিজদের ‘বেঙ্গালা’, ইংরেজদের ‘বেঙ্গল’—সবই এই নামের ধারাবাহিকতা। ক্ষমতায় ওঠার রোমাঞ্চকর পথ ইলিয়াস শাহ ছিলেন পারস্যের সিজিস্তানের অধিবাসী। কিশোর বয়সে একটি অপরাধের দায়ে দিল্লি থেকে পালিয়ে এসে সাতগাঁওয়ে আশ্রয় নেন। অল্পদিনেই শাসক ইজ্জুদ্দীন ইয়াহইয়ার কাছ থেকে মালিক উপাধি পান। এরপর ১৩৩৮ সালে সাতগাঁওয়ের শাসক এবং ১৩৪২ সালে পুরো বাংলার সুলতান। সিংহাসনে বসেই রাজধানী গৌড় থেকে পান্ডুয়ায় স্থানান্তর করেন। দ্রুতই পান্ডুয়া হয়ে ওঠে বাংলার এক প্রধান নগরী। উড়িষ্যা থেকে বেনারস—সাম্রাজ্যের বিস্তার ইলিয়াস শাহ ছিলেন বাংলার প্রথম ‘দূরদর্শী সামরিক কৌশলী’। তার কর্মকাণ্ডে দেখা যায় পরিকল্পনা, গতি ও বিচক্ষণতা। তার প্রধান অভিযানগুলো— ১৩৪৪: ত্রিহুত দখল ১৩৫০: নেপাল অভিযান ১৩৫২: সোনারগাঁও জয়—সমগ্র বাংলা একীভূত ১৩৫৩: বিহার দখল এরপর বেনারস, গোরখপুর, চম্পারন পর্যন্ত অগ্রসর ১৩৫৭: কামরূপ জয় একদিকে উড়িষ্যা উপকূল, অন্যদিকে নেপালের পাদদেশ, আবার উত্তরে হিমালয় সংলগ্ন জনপদ—এসবই ইলিয়াস শাহের কর্তৃত্বাধীন অঞ্চলের অংশ হয়ে ওঠে। দিল্লির সঙ্গে সংঘাত: কূটনীতির অনন্য উদাহরণ বাংলার উত্থান দিল্লির তুঘলক শাসক ফিরোজ শাহ তুঘলককে বিচলিত করেছিল। তিনি বাংলায় সামরিক অভিযান চালালে ইলিয়াস শাহ সরাসরি মোকাবিলা না করে কৌশলগত অপেক্ষা করেন। নদী-নালা পরিবেষ্টিত বাংলার ভৌগোলিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে সংঘর্ষ এড়িয়ে তিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করেন। এ ছিল মধ্যযুগীয় কূটনীতির এক নিখুঁত উদাহরণ। সুশাসন ও জনশক্তির উত্থান ইলিয়াস শাহের প্রশাসনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য— তিনি শাসনব্যবস্থাকে স্থানীয় মানুষের হাতে তুলে দেন। বাংলার সাধারণ মানুষকে বৃহৎ পরিসরে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন করব্যবস্থা সহজ করেন পান্ডুয়া ও গৌড়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ঘটান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেন এই সময়ে বাংলায় শান্তি, বাণিজ্য ও কৃষিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে। কেন ইলিয়াস শাহকে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের জনক’ বলা হয়? জিয়াউদ্দীন বারানী প্রথম বাংলাকে উল্লেখ করেন ইকলিম-ই-বাঙ্গালাহ নামে। পরবর্তীতে শামস-ই-সিরাজ তাকে আখ্যা দেন— ‘সুলতান-ই-বাঙ্গালাহ’ ‘শাহ-ই-বাঙালিয়ান’ তারই সময়ে বাংলা প্রথম একটি একীভূত সত্তায় রূপ নেয়, যার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে পরবর্তী ৬০০ বছরের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়—বাঙালিত্ব। ইলিয়াস শাহের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই স্বাধীন সালতানাত প্রায় দুই শতাব্দী টিকে ছিল—যা বাংলার রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে এক বড় ভিত্তি। ৬৭৫ বছর পরও যে ইতিহাস অনুপ্রেরণা দেয় ১৩৫০ সালের সেই নেপাল অভিযান শুধু সামরিক সাফল্য ছিল না—এ ছিল বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়ার এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। জাতিগত, ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে বাঙালিত্বের যে ভিত্তি আমরা আজ দেখি, তার বীজ রোপণ করেছিলেন সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ। তার বিজয়ের ৬৭৫তম বর্ষে আমরা শুধু ইতিহাস স্মরণ করি না— সেই সাহস, দূরদর্শিতা ও জাতি গঠনের ঐতিহ্যকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।